কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৬ মার্চ) :: পর্যটন শহর কক্সবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। অলিগলিতে, যেখানে-সেখানে, যত্রতত্র এসব রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে।
জানা যায়, পর্যটন শহর কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলে এখন রেস্তোরাঁর সংখ্যা হাজারের বেশি। পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে এ রকম রেস্তোরাঁ রয়েছে সামান্যই। রুফটপে রেস্তোরাঁ আছে ২০ থেকে ৫০টির মতো।
এসব অধিকাংশ রেস্তোরাঁর নেই কোনো কাগজপত্র, নেই অনুমোদন। উপেক্ষিত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, জরুরি বহির্গমনের মতো বিষয়গুলো। দেখভাল করার যেন কেউ নেই। কোনো অঘটন ঘটলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সম্প্রতি ঢাকার বেইলি রোড় ট্র্যাজেডির পর এসব অবৈধ রেস্তোরাঁর বিষয় সামনে আসছে।
তবে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস এবং রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ, রিসোর্ট রয়েছে মোট ৪৯৮টি। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ রয়েছে চার শতাধিক। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ১৫০টি আবাসিক হোটেল এবং ৬৯টি রেস্তোরাঁর। এমন হোটেল-রেস্তোরাঁও আছে, যেগুলো আসলে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য নয়।
সম্প্রতি ঢাকার বেইলি রোড দুর্ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনে অভিযান চালায়।
এসময় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহারসহ নানান ত্রুটি পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের আইন অনুযায়ী ৫২ ধারায় হোটেল লং বিচকে ১ লাখ, হোটেল সী প্যালেসকে ৫০ হাজার, হোটেল কল্লোলকে ৫০ হাজার,হোটেল মিডিয়ার রেস্তোরাঁকে ৫০ হাজার,কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁকে ২০ হাজার টাকা এবং হোটেল মিডিয়াকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট নওশের ইবনে হালিমের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে। এসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও পুলিশ এ অভিযানে অংশ নেয়।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র অফিসার দোলন আচার্য্য ( পি এফ এম এস) বলেন, কক্সবাজার লংবীচ হোটেল,কাচ্চি ডাইংসহ ৭টি রেস্তোরায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অচলসহ নানান ত্রুটি পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদেরকে দুই মাসের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এসময়ের মধ্যে অচল যন্ত্রসহ অন্যান্য ত্রুটিগুলো ঠিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
হোটেল ও রেস্তোরাঁ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী হোটেল ও রেস্তোরাঁ নিবন্ধনের শর্তেই বলা আছে, নিবন্ধন পেতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভবন নির্মাণের অনুমোদন ও শর্ত পূরণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, ভবনের পূর্ণাঙ্গ কাঠামোগত প্ল্যান জমা দিয়ে নিবন্ধন নিতে হয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে।
এছাড়া পৌরসভা/সিটি করপোরেশনকে ব্যবসায়িক সনদ বা ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলেও ভবন ব্যবহার অকুপেন্সি ও ভবন সরবরাহকৃত সব সেবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দরকার। কিন্তু পর্যটন শহর সহ কলাতলী এলাকাগুলোতে ইচ্ছামতো রেস্তোরাঁ ব্যবসা চলছে।
প্রশাসন বলছে, অবকাঠামোগত ত্রæটি, ভবন ব্যবহারে অনিয়ম ও যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা ঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাবে সরকার। এছাড়া অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ তৈরি এবং তাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনার প্রশ্রয়দাতা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও সাজার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিষয়গুলো আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি।
কক্সবাজার বাসী একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে যাবে কোথায়? ওই এক চিলতে রেস্তোরাঁই ভরসা। কিন্তু সেই ভরসারস্থল যদি হয় মৃত্যুকূপ, তাহলে কোথায় যাব? এখনই সময় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁ চিহ্নিত করা। তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। সর্বত্র সজাগ হওয়া জরুরি। কোড মেনে ভবন নির্মাণ জরুরি।
Posted ১:২২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta